কুর্চি,

তোমার চিঠি হঠাৎ এই শীতের সকালে এক রাশ উষ্ণতা বয়ে আনলো। পাতা ঝরে যাচ্ছে সামনের শালবনে, বিবাগী হচ্ছে ভোগী । রিক্ততার দিন আসছে সামনে। এরই মধ্যে তোমার চিঠি যৌবনের ধুতির মত এলো এক ঝাঁক টিয়ার উল্লাসিত সমস্ত সবুজ চিৎকারের মত। তার মানে এই নয় যে- তোমার চিঠি দুর্বোধ্য। উপমার খুত ক্ষমা করে দিও। কেমন আছ তুমি? জানতে চাইলেও জানতে পাই কই?

সকাল থেকেই তোমাকে আজ খুব সুন্দর একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছিল। ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই তোমার কথা মনে পড়ছিল খুবই। আজকে ঘুম ভাঙ্গলো বড় এক চমকে। এক জোড়া পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। যে পাখিদের ডাক বড় একটা শুনিনি এদিকে। কম্বল ছেড়ে দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি- এক জোড়া স্কারলেট মিনি-ভেট এসে বসেছে আম গাছের মাথায়।আমার ঘুম ভাঙ্গানিয়া পাখিরা- আহা রোজই যদি আসতো। আর তারপরই তোমার এই চিঠি। দিন আজকে ভালো যাবে আমার।

বলছিলাম যে, সকাল থেকেই তোমাকে সুন্দর একটি চিঠি লিখবো ভাবছিলাম। কিন্তু সুন্দর সুখের যা কিছু ইচ্ছা তা দমন করার মধ্যেও বোধহয় এক ধরনের গভীরতর সুখ নিহিত থাকে। থাকে না? আজ চিঠি লিখবোনা তোমাকে, তার বদলে একটি স্বপ্নহার পাঠাচ্ছি, লেখক , কবি না তবুও তার নাম গোপন থাক। কি যে দেখেছিলাম তোমার ঐ মুখটিতে কুরচি। এত যুগ ধরে কত মুখইতো দেখলো এই পোড়া চোখ দু’টি। কিন্তু, কিন্তু এমন করে আর কোনো মুখ’এইতো আমার সর্বস্বকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করেনি। ভালো না বাসলেই ভালো…… বড় কস্ট ভালোবাসায়।

ভালোবাসাতো কাউকে পরিকল্পনা করে বাসা যায় না। ভালোবাসা হয়ে যায়, ঘটে যায়। এই ঘটনার ঘটার অনেক আগের থেকেই মনের মধ্যে প্রেম পোকা কুড়তে থাকে। তারপর হঠাত’ই এক সকালে এই দুঃখ সুখের ব্যাধি দূরারোগ্য ক্যান্সারের মতই ধরা পড়ে। তখন আর কিছুই করার থাকে না। অমোঘ পরিণতির জন্যে অশেষ যন্ত্রনার সংগে শুধু নীরব অপেক্ষা তখন। কেউ যেনো কাউকে ভালো না বাসে। জীবনের সব প্রাপ্তিকে এ যে অপ্রাপ্তিতেই গড়িয়ে দেয়। তার সব কিছুই হঠাৎ মূল্যহীন হয়ে পরে। …। তখন আর কিছুই করার থাকে না। অমোঘ পরিণতির জন্যে অশেষ যন্ত্রণার সংগে শুধু নীরব অপেক্ষা তখন। কেউ যেনো কাউকে ভালো না বাসে। জীবনের সব প্রাপ্তিকে এ যে অপ্রাপ্তিতেই গড়িয়ে দেয়। তার সব কিছুই হঠাৎ মূল্যহীন হয়ে পরে। হুস থাকলে এমন মূর্খ্যামী কেউ কি করে, বলো? সে জন্যে বোধহয়, হুসের মানুষদের কপালে ভালোবাসা জোটে না। যারা হারাবার ভয় করে না কিছুতেই, একমাত্র তাঁরাই ভালোবেসে সব হারাতে পারে। অথবা অন্যদিক দিয়ে দেখলে মনে হয়, যাকিছুই সে পেয়েছিলো বা তাঁর ছিলো, সেই সমস্ত কিছুকেই অর্থবাহী করে তোলে ভালোবাসা। যে ভালোবাসেনি তাঁর জীবন বৃথা। তবুও বড় কষ্ট ভালোবাসায়। এমন মহা বোধ আর কি আছে?

স্বপ্নহার, তোমায় পাঠাই….

নীল নদীটির নিবিড় পাড়ে,

ঘুম পাওয়া রোদ চমকে চেয়ে অলস পায়ে,

যখন হাটে মাঘী মাঠের ন্যবা ধরা শুন্যতাতে

ঠিক তখনই আমার বুকের গভীর থেকে

স্বপ্নগুলো ঝাপটে ডানা

অস্ফুটে কি কইতে কইতে নড়েচড়ে!

….

স্বপ্নগুলো খুব ভীতু হয়,

আমার স্বপ্ন; সবার স্বপ্ন।

তবুও আমি স্বপ্ন দেখি

রুপের রাজা, গুনের গুনীন,

মুঠির মাঝে মুক্ত মলিন,

সব পাখিদের মুগ্ধ করা মন্ত্র নিয়ে

আসবো ফিরে বারে বারে।

আমার কিছু স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন নিয়ে মালা গাঁথি

স্বপ্ন মালা।

ছিপছিপে সেই মেয়ে, ছিপছিপে সে।

শ্যামলা বরণ প্যাঁচ গুছি শাড়ি

তার স্বপন পুরে বাড়ি, আমার সংগে আড়ি।

স্বপ্নে দেখা নারী, প্যাঁচ গুছি শাড়ির আঁচল

ঠোটের কনে তিল, স্বপ্ন মালায় গেঁথে গেল

হরিণ চিতা চিল।

স্বপ্নে আমি ভেবেছিলাম অনেক কিছুই-

ভেবেছিলাম এটা করবো, সেটা করবো।

বাড়ি করবো, পাহাড় চুড়ায় স্বপ্ন এবং সুখের কুটো দিয়ে।

পায়ের কাছে বইবে নদী নারীর মত, সাধের নারী

বাধ্যতা আর নাব্যতা’তে নীল।

স্বপ্ন উড়ে স্বপ্ন উড়ে বারে বারে।

কুর্চি , দেখি কি করতে পারি? তোমার সাথে বেড়াতে যাবার। ইচ্ছে তো কত কিছুই করে। এই জীবনে ক’টি ইচ্ছে পুণ্য হয় বলো? কারই’বা হয়? এমনিতে আমার অনেক কষ্ট। এমন করে ডাক পাঠিয়ে আর কষ্ট বাড়িও না। একা একা মজা করতেও বিবেকে লাগে। যার বিবেক বেঁচে থাকে, তার সুখ মরে যায়। সুখী হবার সহজ উপায় বিবেকহীন হওয়া। বিবেক বিবশ হলেই বাঁচি।

ভালো থেকো

তোমার পৃথুদা

[বুদ্ধদেব গুহ। মাধুকরী উপন্যাস থেকে সংকলিত