‘কই, কেউ তো আসে না।’ মন খারাপ করে বলল তিথি। বলতে গিয়ে ওর চেহারাটা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।
‘আরে আসবে আসবে, অপেক্ষা কর।’ সাদিয়া তিথিকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করে।
ওরা দুই বন্ধু একটা গল্পের দুটো চরিত্র। মলাটবন্দী বইয়ের ভেতর ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছিল, কেউ যদি ওদের গল্পটা পড়ে! কী মজার একটা গল্প ওদের! মলাটটাও রঙিন। অথচ কেউ একটু হাতে নিয়েও দেখছে না। পাঠকদের অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই। বইমেলায় থরে থরে সাজানো বইয়ের মধ্যে তিথি-সাদিয়ার গল্পের বইটা চাপা পড়ে গেছে একটা ভোটকা বইয়ের নিচে।
তিথি একবার বইয়ের ভেতর থেকে মাথা বের করে বলতে চেষ্টা করেছিল, ‘এই যে বই বিক্রেতা ভাই, আমাদের একটু ওপরের দিকে রাখেন। নইলে পাঠক দেখবে কীভাবে?’ সাদিয়া টেনে তিথিকে ভেতরে নিয়ে গেছে। সাদিয়া সব সময় তিথিকে শাসনে রাখে। তার দাবি, সে তিথির চেয়ে ‘৬ পৃষ্ঠা’ বড়! গল্পে সাদিয়ার কথা এসেছে ৪ নম্বর পৃষ্ঠায়, আর তিথির নাম ১০ নম্বর পৃষ্ঠায়। কিন্তু তাতে কী? গল্পে তো দুজন বন্ধু, সমবয়সী। তবু সাদিয়া মুরব্বি ভাব দেখানোর সুযোগ ছাড়ে না।
এমন সময় একটা ছোট্ট ছেলে বইয়ের দোকানটার দিকে এগিয়ে আসে। মোটা বইটা সরিয়ে তিথি-সাদিয়ার বইয়ের মলাটটা মন দিয়ে দেখে।
উত্তেজনায় তিথির বুক ঢিপ ঢিপ করে। ‘সাদ্দু! দ্যাখ দ্যাখ, একজন খুদে পাঠক! মনে হচ্ছে আমাদের ও নেবে!’
খুদে পাঠকের নাম নাজিফ। সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আম্মু, আমি এই বইটা নেব।’
‘হুররেএএএ!’ বইয়ের ভেতর থেকে চিৎকার করে ওঠে গল্পের দুই চরিত্র তিথি আর সাদিয়া। ওদের চিৎকার কেউ শুনতে পায় না।