রোমানটিক সিনেমায় প্রায়শই দেখা যায় পারিবারিক কারণে প্রেমের পরিনতি। পারিবারিক দাম্বিবকতার কারণে বেশিরভাগ পরিবার তাদের ছেলে মেয়েদের পছন্দকে পাত্তা দেয় না। বরং বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে গড়ে উঠা সম্পর্কটি ভেঙ্গে দেন। আজ, আমরা এমন একটি গল্প সম্পর্কে জানব যেখানে একটি মেয়েকে প্রেমে পড়ার অপরাথে 25 বছরের জন্য একটি অতিকায় ছোট্ট ঘরে আটকে রেখে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।


ব্লেঞ্চ মনিয়ার ছিলেন একজন অসাধারণ সুন্দরী হাসিখুশি ফরাসী বনেদি পরিবারের মেয়ে।  1976 সালে তার বয়স ছিল 25 বছর। তরুনী মনিয়ার তারই এক প্রতিবেশী বয়স্ক আইনজীবির প্রেমে পড়েছিল এবং তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার মা ম্যাদেম মনিয়ার মেয়ের পছন্দকে কিছুতেই মানতে পারেননি। পাত্র হিসেবে এমন অর্থশূণ্য আইনজীবির নিকট তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না সোজাসুজি জানিয়ে দিলেন ব্লেঞ্চ মনিয়ারকে। 
মনিয়ার এমন ইচ্ছা থেকে সরে না পর্যন্ত তাকে একটি ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হল। তার মা চেষ্টা করেছেন ব্লেঞ্চির মনকে পরিবর্তন করার। কিন্তু কোন সাফাল্য আসেনি। ব্লেঞ্চ তার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিল। মা মেয়ের এ নিয়ে লড়াই চলতে থাকে।
ধীরে ধীরে ব্লেঞ্চির নাম প্যারিস হতে হারিয়ে গেছে। কেউ, এমনকি তার বন্ধুরাও জানত না সে কোথায় ছিল। তার মা ও ভাই প্রতিনিয়ত শোক করতে থাকে ব্লেঞ্চীর জন্য। কেউ জানে না কোথায় হারিয়ে গেছে মিষ্টি মেয়েটি। 

বছর কেটে যায়। ব্লেঞ্চির
প্রণয়ী সেই উকিল আশায় ছিল ফিরবে একদিন। আশা নিয়েই 1985 সালে তিনি মারা যান। তবুও ব্লেঞ্চি আলো ছাড়াই তার বাড়িতে অতিকায় ক্ষুদ্র ঘরে কারাগার জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মায়ের বর্জিত খাবার তাকে দেয়া হতো। তার বদ্ধ ঘরে একমাত্র ইদুর ছিল তার সঙ্গী। এটা শুধু তার মা নয় ভাই জানত। বাড়ির সার্ভেন্ট এ ঘটনায় এ্যারেস্টের ভয়ে কোথায় বিষয়টি প্রকাশ করেন নি। 

23 মে, 1901 সালে প্যারিসের এটর্নি জেনারেল হঠাৎ একদিন অজ্ঞাতনামার কাছ হতে একটি চিরকুট পান। চিঠিটি তিনি পরেন-
"সম্মানিত অ্যাটর্নি জেনারেল: আপনাকে একটি অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে চাই। আমি এমন একজনের কথা বলছি যিনি ম্যাদেম মনিয়ার এর ঘরে আটকে আছেন, অর্ধাহারে অনাহারে এবং গত পঁচিশ বছর ধরে বাস করছেন এমন একটি ঘরে যা ভরে আছে তার নিজেরই বর্জ্যে।"
তিনি এই জাতীয় নামী পরিবারের এমন নোংরা অপরাধের কথা ভাবতে পারেননি। ম্যাদেম মনিয়ার দাতব্য কাজের জন্য প্যারিসিয়ান উচ্চ সমাজে পরিচিত ছিল। এমনকি তিনি তার উদার অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে একটি সম্প্রদায়ের পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তার ছেলে মার্সেল স্কুলে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং একজন শ্রদ্ধেয় আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছিলেন। 

পুলিশ ডিপার্টমেন্টে যেন বাজ পড়ল। তক্ষনি ইন্সপেকশন এ যায় তারা Monnier Manson এ। মিসেস Monnier আর তার ছেলের বাধা সত্ত্বেও ঢুকে পড়ে পুলিশ বাড়িতে। অবশেষে বাড়ির দোতলায় পাওয়া যায় একটি লুকানো আটফুট বাই আটফুট কক্ষ। ভয়ংকর দুর্গন্ধের জন্য কেউই সেই রুমে ঢুকতে পারছিলনা। অবশেষে যখন সেই রুমে পুলিশ আলো ফেলে, দেখতে পায় রক্তহিম করা দৃশ্য।

উলংগ একটি জীব, বহুকষ্টে যাকে মানুষ বলে চেনা যায়, পড়ে আছে মেঝেতে। সারা ঘর ভর্তি তার নিজের মলমূত্রতে। সারা ঘরে গিজগিজ করছে নানা জাতের পোকা, ইদুর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পচা খাবারের অংশ। ভিতরের বাতাস এতই বিষাক্ত যে শ্বাস নেয়া যায়না। ভয়ংকর এ দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ২ জন পুলিশ। নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে চাওয়ায় আজ মানুষ হতে এক ভীত জন্তুতে পরিনত হয়েছে এককালের পরমা সুন্দরী Blanche Monnier.

তাকে উদ্ধার করে হসপিটালে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে আর মানসিক সুস্থ্যতা ফিরে পায়নি। 1913 সালে তিনি মারা যান।